প্রথম অধ্যায়
গৌতম বুদ্ধের জীবন ও শিক্ষা
গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক। তাঁর জীবনদর্শনই বৌদ্ধধর্মের মূল ভিত্তি। জন্ম থেকে মহাপরিনির্বাণ লাভ পর্যন্ত সুদীর্ঘ আশি বছরব্যাপী জীবনে বুদ্ধ নৈতিকতা ও মানবতার বহু বিরল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। রাজকুমার হয়েও মানুষের দুঃখমুক্তির উপায় অনুসন্ধানের জন্য তিনি গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেন । তারপর ছয় বছর কঠোর সাধনায় লাভ করেন বুদ্ধত্ব। আবিষ্কার করেন দুঃখমুক্তির পথ। সর্বজীবের কল্যাণের জন্য তিনি প্রচার করেন তাঁর নবলব্ধ ধর্ম এবং প্রদর্শন করেন দুঃখমুক্তির সেই পথ। তাঁর জীবন ছিল মৈত্রী-করুণার রসে সিক্ত। জীবপ্রেম, অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করে তিনি মহাকারুণিক বুদ্ধ নামে খ্যাত হন। তাঁর মহাকরুণার বাণী পৃথিবীর বৃহত্তর থেকে অতি ক্ষুদ্র প্রাণীকেও রক্ষার প্রেরণা যোগায়। সমাজে যারা অস্পৃশ্য বলে উপেক্ষিত হয়েছে তিনি তাদের উপেক্ষা করেননি। তিনি তাদেরকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পথভ্রান্তকে পথ প্রদর্শন করে সৎ পথে পরিচালিত করেছেন। পঙ্কিল জীবনযাপনকারীকে পঙ্কিলতামুক্ত করেছেন। শোক-দুঃখে জর্জরিত মানুষকে নির্বাণের পথে পরিচালিত করে শোক-দুঃখহীন করেছেন। মানুষকে নৈতিক ও মানবিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। তাই সভ্যতার ইতিহাসে গৌতম বুদ্ধ অনন্য স্থান দখল করে আছেন। এই অধ্যায়ে আমরা গৌতম বুদ্ধের জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে অধ্যয়ন করব ।
এ অধ্যায় শেষে-
পাঠ : ১
সিদ্ধার্থের জন্ম
হিমালয়ের পাদদেশে কপিলাবস্তু নামে একটি সুন্দর শান্তিপূর্ণ রাজ্য ছিল। শাক্যরা সেখানে বাস করতেন। এ-রাজ্যের রাজার নাম শুদ্ধোদন, রানি মহামায়াদেবী। রাজ্যে সুখ শান্তির অভাব ছিল না। কিন্তু রাজা ও রানির মনে শান্তি নেই। কারণ, তাঁদের কোনো সন্তান নেই। একটি সন্তানের আশায় রাজা-রানি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন।
আষাঢ়ী পূর্ণিমার উৎসব শেষ করে রানি মায়াদেবী ঘুমিয়ে পড়লেন। আকাশে পুর্ণিমার চাঁদ ছিল। চাদের আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত। রানি এক অপূর্ব সুন্দর স্বপ্ন দেখলেন। চারদিক থেকে চার দিকপাল দেবতা এসে রানিকে সোনার পালঙ্কে স্কুলে নিলেন তারপর তাঁকে নিয়ে গেলেন হিমালয় পর্বতের মানসসরোবরে। ওখানে দেবতাদের মহিষীরা মান্নাদেবীকে স্নান করিয়ে সুবাসিত দিব্যবস্ত্রে ভূষিত করলেন। রানি আরও দেখলেন তিনি সোনার পালঙ্কে ভয়ে আছেন। পাশের স্বর্ণপর্বত থেকে এক শ্বেতহস্তী নেমে এল, শুঁড়ে ছিল একটি শ্বেতপত্র। শ্বেতহস্তীটি রানির পালঙ্কের চারপাশে তিনবার প্রদক্ষিণ করল। এরপর রানির জঠরের দক্ষিণ দিকে শ্বেতগল্পটি প্রবেশ করিয়ে দিলেন। রানি অলৌকিক আনন্দে শিহরিত হলেন। আকাশে ছিল আষাঢ়ী পূর্ণিমার উজ্জ্বল চাঁদ।
পরদিন ঘুম থেকে জেগে রানি তার স্বপ্নের কথা রাজা শুদ্ধোদনকে বললেন। রাজা সকল রাজ-জ্যোতিষীকে থেকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। তাঁরা বললেন, “মহারাজ, সুসংবাদ আছে, আনন্দ করুন, রানি মায়াদেবীর পুত্রসন্তান হবে। শাক্যবংশে এক মহাপুরুষের আবির্ভাব হবে। কাদে তিনি সর্বজীবের দুঃখহরণকারী মহাজ্ঞানী হবেন। আনন্দ করুন মহারাজ।”
এভাবে দিন চলে যায়, এল সেই শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথি। এ-সময় রানির পিতৃগৃহে যাওয়ার ইচ্ছা হলো। রাজা সম্মতি দিলেন এবং পিতৃগৃহে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। রানির যাত্রাপথ কপিলাবস্তু থেকে দেবদহ পর্যন্ত সজ্জিত ও সমতল করা হলো। সখীদের সঙ্গে নিয়ে রানি সোনার পালকিতে চড়ে পিত্রালয়ে চললেন। পথে দুই নগরের মাঝে লুম্বিনী কানন। শালবিথীকায় ঘেরা, চারিদিকে ফুল পাতার সমারোহ, পাখির কলকাকলিতে মুখর এই ছায়াশীতল কাননে রানির বিশ্রামের ইচ্ছা হলো। তাঁর নির্দেশে পালকি থামানো হলো । রানি কিছুদূর হেঁটে এক শাল তরুর নিচে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে একটি শাখা ধরলেন। তখনই তাঁর প্রসববেদনা শুরু হলো। সহচরীরা জায়গাটির চারিদিকে কাপড় দিয়ে ঘিরে দিলেন।
লুম্বিনী কাননের শালবৃক্ষের নিচে বৈশাখী পূর্ণিমার শুভক্ষণে জগতের আলো ভাবী বুদ্ধ সিদ্ধার্থ গৌতম ভূমিষ্ঠ হলেন। অনেক সাধনার পর সিদ্ধ হয়েছে রাজা-রানির মনোবাসনা, তাই পুত্রের নাম রাখা হলো সিদ্ধার্থ। কথিত আছে, সিদ্ধার্থ জন্মেই সাতটি পদক্ষেপে অগ্রসর হয়েছিলেন, প্রতি পদক্ষেপে একটি করে পদ্মফুল ফুটেছিল। এ-সময় চারদিকে দেবতারা আনন্দধ্বনি উচ্চারণ করেছিলেন। জগতে সিদ্ধার্থ জন্মগ্রহণ করলেন। কথিত আছে যে, একই দিনে গয়ার বোধিবৃক্ষ, রাহুলমাতা গোপাদেবী, চার নিধি কুম্ভ, চার মঙ্গল হস্তী, অশ্বরাজ কন্থক, সারথি ছন্দক ও অমাত্যপুত্র উদায়ীও জন্মগ্রহণ করেন। সিদ্ধার্থের জীবনের সাথে এঁদের বিশেষ সম্পর্ক ছিল।
শিশু কুমারকে নিয়ে মহাসমারোহে রানি কপিলাবস্তু ফিরে এলেন। রাজ্যে খুশির বন্যা বয়ে গেল। উৎসবে মেতে উঠল নগরবাসী। কিন্তু এই আনন্দে বিষাদের ছায়া নেমে এল। রানি মায়াদেবী সাত দিন পরে মারা গেলেন। শিশু সিদ্ধার্থের লালন পালনের ভার নিলেন বিমাতা মহাপ্রজাপতি গৌতমী। তিনি মায়াদেবীর সহোদরা ছিলেন। গৌতমীর দ্বারা লালিত পালিত হন বলে সিদ্ধার্থ গৌতম নামে পরিচিত হলেন। বিশ্বে তিনি গৌতম বুদ্ধ নামেই পরিচিত।
অনুশীলনমূলক কাজ সিদ্ধার্থের জন্ম-কাহিনীটি বর্ণনা কর |
পাঠ : ২ বাল্যকাল
রাজকুমার সিদ্ধার্থের জন্মের পরে তাঁকে দেখতে এলেন ঋষি অসিত। তিনি মহর্ষি কালদেবল নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি শিশু রাজকুমারকে দেখে অভিভূত হয়ে প্রথমে উল্লাস প্রকাশ করলেন। একটু পরেই তাঁর দু'চোখ অশ্রুতে ভিজে গেল। মহারাজ উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলেন তাঁর এই অকস্মাৎ আনন্দ ও বিষাদের কারণ। ঋষি অসিত বললেন, “মহারাজ, এই কুমার মহাজ্ঞানী বুদ্ধ হবেন, জগৎকে দুঃখমুক্তির পথ প্রদর্শন করবেন। এজন্যে আমি উল্লসিত হয়েছি। কিন্তু আমি বয়োবৃদ্ধ। বুদ্ধের অমিয়বাণী শোনার সৌভাগ্য আমার হবে না, বহুপূর্বেই আমার মৃত্যু হবে। এজন্যে মন বিষণ্ণতায় ভরে উঠল
বিমাতা গৌতমীর পরিচর্যায় সিদ্ধার্থ পরম যত্নে বড় হতে লাগলেন। পোষা শশক ও মৃগশাবক, মরাল ও ময়ূর ছিল তাঁর খেলার সাথি। প্রাসাদ ও উদ্যানের অনুপম পরিবেশে শৈশবের দিনগুলো তাঁর আনন্দেই কাটছিল। রাজা কুমারকে চোখের আড়াল করতে চাইতেন না। একবার নগরে হলকর্ষণ-উৎসব হচ্ছে। ঐদিন রাজা, অমাত্যবর্গ ও সম্রান্তরা নিজের হাতে হাল বা লাঙল চালনা করে সারা বছরের কৃষিকাজের শুভসূচনা করতেন। রাজা কুমারকে নিয়ে উৎসবে যোগ দিলেন। এখানেই কুমার প্রত্যক্ষ করলেন, হলকর্ষণে ভেজা মাটি থেকে বেরিয়ে পড়া পোকামাকড়গুলোকে পাখিরা খেয়ে যাচ্ছে, ব্যাঙ এসে খাচ্ছে। একটা সাপ এসে ব্যাঙটিকে গিলে ফেলল । আবার কোথা থেকে একটা চিল উড়ে এসে সাপটিকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল । চোখের সামনে ঘটে-যাওয়া ঘটনাগুলো সিদ্ধার্থকে উদ্বিগ্ন করে তুলল। বেঁচে থাকার জন্যে মানুষ ও প্রাণিকুলের এ নিষ্ঠুরতার কথা ভাবতে ভাবতে তিনি কোলাহল থেকে নির্জনে চলে গেলেন। এক বিশাল জম্বুবৃক্ষের ছায়ায় বসে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হলেন। এদিকে হলকর্ষণ-উৎসব শেষ, এবার সকলের বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু কুমার কোথায়! চারদিকে খোঁজার পরে তাঁকে পাওয়া গেল জম্বুবৃক্ষের ছায়ায় ধ্যানমগ্ন। জ্যোতির্ময় আভায় উদ্ভাসিত কুমারের অবয়ব। রাজা ও অন্যেরা এ-দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েন। অভাবিত এ ঘটনায় রাজাসহ সকলে বিহ্বল হয়ে পড়েন। রাজা শুদ্ধোদন পুনরায় স্মরণ করলেন ঋষি অসিতের ভবিষ্যদ্বাণী। ধ্যানভঙ্গ হলে রাজা পুত্রকে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে এলেন ।
বড় বড় পণ্ডিতের কাছে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হলো। ব্রাহ্মণপুত্র বিশ্বমিত্রের কাছে তাঁর প্রথম বিদ্যাশিক্ষা শুরু হয়। বর্ণ পরিচয়ের প্রারম্ভেই সিদ্ধার্থ তাঁর অতুলনীয় প্রতিভা প্রদর্শন করেন। প্রতিটি বর্ণ উচ্চারণের সাথে সাথে সেই বর্ণসমন্বিত একটি করে নীতিবাক্য উচ্চারিত হলো তাঁর মুখ দিয়ে। ক্রমে তিনি নানাবিধ
ভাষা, শাস্ত্র ও চৌষট্টি প্রকার লিপিবিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। বেদ, পুরান, ইতিহাস, যোগ, বৈশেষিক, ন্যায়, গণিত, চিকিৎসাবিদ্যা ইত্যাদি শাস্ত্রও আয়ত্ত করলেন। একইসঙ্গে রাজনীতি, মৃগয়া, অশ্বচালনা, ধনুর্বিদ্যা, রথচালনা ইত্যাদি ক্ষত্রিয়োচিত দক্ষতাও আয়ত্ত করলেন সাফল্যের সঙ্গে। তবে তিনি কিছু ব্যতিক্রম আচরণ দেখালেন। যেমন অশ্বচালনায় জয়লাভ করার পূর্বক্ষণে ঘোড়ার রাশ ছেড়ে দিলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী দেবদত্তকে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ দিলেন। একবার মৃগয়ায় গিয়ে হাতের কাছে পেয়েও শিকার ছেড়ে দিলেন। এতে সঙ্গীরা বিরক্ত হলেও অসহায় হরিণশিশুর প্রাণরক্ষা হওয়ায় তিনি আনন্দিত হলেন ।
বাল্যকালেই সিদ্ধার্থের অনন্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। সিদ্ধার্থ তাঁর মেধা দিয়ে কপিলাবস্তু ও দেবদহ রাজ্যের মধ্যে প্রবাহিত রোহিনী নদীর পানি নিয়ে সৃষ্ট সংকটের সমাধান করেন। রোহিনী নদীতে একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষ পড়ে বাঁধের সৃষ্টি করে। ফলে সকল পানি কপিলাবস্তুর দিকে প্রবাহিত হতে থাকে এবং দেবদহ নদীর পানি থেকে বঞ্চিত হয়। উভয় নগরের অধিবাসীরা অনেক চেষ্টা করেও বৃক্ষটি স্থানচ্যুত করতে পারছিলেন না। অনেক মানুষের কোলাহল শুনে নিকটেই ক্রীড়ারত সিদ্ধার্থ দলবলসহ ঐস্থানে উপস্থিত হলেন। শাক্য যুবকেরা অনেক চেষ্টা করেও বৃক্ষটি নাড়াতে সমর্থ হলো না। তখন সিদ্ধার্থ গাছটির অগ্রভাগ ধরে স্রোতের অনুকূলে জোরে টান দিলেন, এতে গাছটির যে-অংশ মাটিতে দেবে গিয়েছিল সে-অংশ মাটিসহ আড়াআড়ি অবস্থান থেকে লম্বালম্বি অবস্থানে সরে গিয়ে জলের প্রবাহ উন্মুক্ত হয়।
কুমার ক্রমে কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে উপনীত হন। চপলতা ও উদ্দামতা এ-বয়সের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সিদ্ধার্থের আচরণে ভিন্নতা দেখা গেল। প্রশান্তচিত্তে তিনি প্রায়ই প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতেন। কখনো কখনো সাথিদের ছেড়ে দূরে একান্তে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন ।
একদিন এভাবেই উদ্যানে বসে কুমার প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন। নীল আকাশে একদল সাদা হাঁস উড়ে যাচ্ছিল। সিদ্ধার্থ মুগ্ধ হয়ে ঐ সুন্দর দৃশ্য দেখছিলেন। হঠাৎ তীরবিদ্ধ হয়ে একটি সাদা হাঁস তাঁর কোলে এসে পড়ল, রক্তাক্ত হাঁসটি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তীরবিদ্ধ হাঁসের কষ্ট দেখে সিদ্ধার্থের অন্তর করুণায় প্লাবিত হলো। তিনি সযত্নে তীরটি ছাড়িয়ে নিলেন। সেবা শুশ্রূষা করে হাঁসটিকে বাঁচিয়ে তুললেন। এমন সময় আরেক রাজকুমার দেবদত্ত এসে হাঁসটি দাবি করল। বলল, কুমার, হাঁসটি আমার, আমি তীরবিদ্ধ করেছি। হাঁসটি আমাকে ফিরিয়ে দাও। সিদ্ধার্থ হাঁসটি ফিরিয়ে দিলেন না। তিনি বললেন, তুমি হাঁসটিকে তীরবিদ্ধ করে হত্যা করতে চেয়েছিলে। আমি ওর জীবন বাঁচিয়েছি। কার অধিকার বেশি? যে জীবন হরণ করতে চায়, তার? নাকি জীবন যে দান করেছে তার? দেবদত্ত কুমারের যুক্তি মানলেন না। এই বিবাদ বিচারের জন্যে প্রবীণদের কাছে উত্থাপন করা হলো। প্রবীণরা সিদ্ধার্থ গৌতমের যুক্তিকে সমর্থন করলেন, বললেন, “কুমার যথার্থই বলেছে। যে জীবন দান করেছে হাঁসের ওপর তার অধিকারই বেশি।” সিদ্ধার্থ হাঁসটি সুস্থ করে তুলে উন্মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দিলেন ।
সিদ্ধার্থ গৌতমের মধুর ব্যবহার, উদারতা, মৈত্রীপূর্ণ আচরণ, প্রজ্ঞাময় দূরদৃষ্টি রাজঅন্তঃপুরবাসী ও প্রজাসাধারণের অন্তর জয় করেছিল। তিনি হয়ে উঠলেন সকলের প্রিয় ।
অনুশীলনমূলক কাজ সিদ্ধার্থের বাল্যকালের যে কোনো একটি ঘটনা বর্ণনা কর |
পাঠ : ৩
সিদ্ধার্থ গৌতম ও গোপাদেবী
সিদ্ধার্থ গৌতম ক্রমে ষোল বছর বয়সে পদার্পণ করলেন। মহারাজ শুদ্ধোদন পুত্রের উদাসীনতা ও বৈরাগ্যভাব অনুধাবন করে পুত্রকে সংসারী করার তাগিদ অনুভব করলেন। তিনি এক স্বয়ংবর সভার আয়োজন করলেন। কুমার সিদ্ধার্থ গৌতম রাজসভায় অশোকভাণ্ড পাশে নিয়ে বসলেন। বিভিন্ন রাজ্য থেকে সুন্দরী রাজকন্যা ও শ্রেষ্ঠীকন্যারা একের পর এক আসলেন। কুমার অশোকভাণ্ড হতে উপহার সামগ্রী তাঁদের হাতে তুলে দিলেন। এভাবে সারাদিন কেটে গেল। অশোকভাণ্ড নিঃশেষ, কুমার কোন রাজকন্যাকেই পছন্দ করতে পারলেন না। আসন ছেড়ে উঠে যাবেন, এমন সময় প্রবেশ করলেন প্রতিবেশী রাজ্য কোলীয় গণতন্ত্রের লাবণ্যময়ী রাজকন্যা সুস্মিতভাষিনী যশোধরা গোপা। অশোকভাণ্ড শেষ। কুমার ইতস্তত বোধ করলেন। তখন দণ্ডপাণি-কন্যা যশোধরা মৃদু হেসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার জন্যে কি কোনো উপহার নেই? রাজপুত্র সিদ্ধার্থ মুহূর্তে নিজ অঙ্গুরীয়টি গোপাদেবীকে পরিয়ে দিলেন। এ-দৃশ্যে সভায় উপস্থিত সকলে আনন্দে মেতে উঠলেন ।
রাজা শুদ্ধোদন গোপার পিতা দণ্ডপাণির নিকট পুত্রের বিবাহের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠান। প্রস্তাব পেয়ে দণ্ডপাণি আনন্দিত হলেন। কিন্তু তিনি জানালেন যে কুলপ্রথা অনুযায়ী তাঁদের কন্যার পাণিপ্রার্থীকে অশ্বচালনা, ধনুর্বাণ, অসিচালনা প্রভৃতিতে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হবে। অতএব নির্ধারিত দিনে দেশ-বিদেশের ক্ষত্রিয় কুমারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলেন রাজকুমার সিদ্ধার্থ। অশ্বচালনা, ধনুর্বাণ, অসিচালনা একে একে সবকটিতেই তিনি জয়লাভ করে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন । সভামঞ্চে গোপা সিদ্ধার্থের গলায় বরমাল্য পরিয়ে দিলেন।
বোধিসত্ত্বের জন্ম-জন্মান্তরের সাথি যশোধরা গোপার সঙ্গেই সিদ্ধার্থ গৌতমের পরিণয় হয়ে গেল। মহা ধুমধামের সাথে মহারাজ শুদ্ধোদন পুত্রের বিবাহ-উৎসব করলেন। গৌতম সংসারী হলেন, রাজাও চিন্তামুক্ত
হলেন।
পাখির কলকাকলিতে মুখর, পুষ্পশোভিত উদ্যানে নির্মিত ভিন্ন ভিন্ন ঋতু উপযোগী সুরম্য প্রাসাদে আনন্দে কাটতে লাগল কুমার সিদ্ধার্থ ও রাজবধূ গোপাদেবীর দিনগুলি। কোথাও কোনো কষ্ট নেই, দুঃখ নেই । জগৎ যেন আনন্দময় ।
অনুশীলনমূলক কাজ রাজা কীভাবে চিন্তামুক্ত হলেন? |
পাঠ : ৪ চারি নিমিত্ত দর্শন
সিদ্ধার্থ একদিন ভ্রমণে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। মহারাজ শুদ্ধোদন পুত্রের ভ্রমণ যেন আনন্দময় হয় সে-ব্যবস্থা করলেন। সারথি ছন্দককে নিয়ে রাজকুমার নগরভ্রমণে বের হলেন। সঙ্গে প্রিয় অশ্ব কন্থক। অনেক দূর তাঁরা ভ্রমণ করলেন। নগরী সুসজ্জিত, নগরবাসী সুসজ্জিত ও সুখী। সকলেই কুমারকে আনন্দের সাথে অভ্যর্থনা জানাল। আরও কিছু দূর অগ্রসর হলেন, হঠাৎ দেখতে পেলেন একজন বৃদ্ধ, দুর্বল ও পক্ককেশ, লাঠিহাতে শীর্ণ শরীরে বহু কষ্টে হেঁটে চলেছেন। সিদ্ধার্থ ছন্দককে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে ছন্দক ? সাদা চুল, স্থূল চর্ম, দুর্বল শরীর? ছন্দক জানালেন, “ইনি বয়সের কারণে বৃদ্ধ হয়েছেন, বয়স বাড়লে সবাই একদিন এমন বৃদ্ধ ও দুর্বল হয়ে যায়।” সিদ্ধার্থ ভাবলেন, আমিও একদিন এমন বৃদ্ধ হব? প্রিয়তমা গোপাদেবীও বৃদ্ধ হবে? তিনি ছন্দককে বললেন, রথ ফিরাও। আজ আর ভ্রমণ করব না ।
পরদিন আবার নগরভ্রমণে বের হলেন। নগরের বাইরে এসে দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি গাছের তলায় হাহাকার করছে, বেদনায় তার মুখ-চোখ কুঁকড়ে গেছে। সিদ্ধার্থ আবার ছন্দককে জিজ্ঞাসা করলেন, “এর কী হয়েছে?” ছন্দক জানালেন, ও ব্যাধিগ্রস্ত। মানুষমাত্রই কোনো না কোনো সময় রোগ ব্যাধি ভোগ করে থাকে। কুমার আবারও বিষণ্ন হলেন। গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলেন। সেদিনও প্রাসাদে ফিরে গেলেন । প্রাসাদে ফিরে কুমার ভাবতে লাগলেন, ঐ বৃদ্ধ আর ব্যাধিগ্রস্ত লোকদের কথা। সবাই কি এমন বৃদ্ধ হবে? ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সকল মানুষকে কি এরূপ কষ্ট পেতে হয় ?
এভাবে তৃতীয় দিন চিন্তামগ্ন সিদ্ধার্থ পুনরায় সারথি ছন্দককে নিয়ে অশ্ব কন্থকের পিঠে চড়ে নগরভ্রমণে বের হলেন। নগরের বাইরে কিছু দূরে এসে তিনি দেখতে পেলেন কিছু লোক একটি শবদেহ কাঁধে নিয়ে বিলাপ করতে করতে যাচ্ছে। শোকাচ্ছন্ন এই দলটিকে দেখে সিদ্ধার্থ ছন্দকের কাছে জানতে চাইলেন, ওদের কী হয়েছে? ওরা কাঁদছে কেন?
ছন্দক বিমর্ষ চিত্তে জানালেন, ওরা একটি মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে । মৃত ব্যক্তি ওদের নিকটআত্মীয়। আপনজনের মৃত্যুতে তারা শোকে বিলাপ করছে। সিদ্ধার্থ পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, বিলাপ করলে কি মৃত ব্যক্তি জীবিত হবে? ছন্দক বললেন, “না কুমার, মৃত ব্যক্তিরা জীবিত হয় না।” তিনি আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সবাইকে কি এরূপ মৃত্যুবরণ করতে হবে?” ছন্দক উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ কুমার, জীবিত সবাইকেই একদিন মারা যেতে হয়।” জীবের এই পরিণতি দেখে সিদ্ধার্থ অত্যন্ত কাতর হলেন। বিষণ্ন মনে ফিরে এলেন প্রাসাদে।
চতুর্থ দিনে নগরভ্রমণে বেরিয়ে তিনি নগরের বাইরে বেশ কিছু দূরে নির্জন জায়গায় বড় গাছের তলায় একজন সন্ন্যাসীকে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দেখতে পেলেন। স্থির, সৌম্য, ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসীকে দেখে সিদ্ধার্থ আকৃষ্ট হলেন। ছন্দককে প্রশ্ন করলেন, ইনি কে? কী করছেন? ছন্দক উত্তর দিলেন, ইনি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী । সংসারের মায়া ত্যাগ করে তিনি সত্য জানার জন্য সাধনা করছেন। মুহূর্তে সিদ্ধার্থ গৌতমের সন্ন্যাস- চেতনা জাগ্রত হলো। সন্ন্যাসীর মধ্যে নিজেকে দেখতে পেলেন তিনি। জগতের দুঃখ, জরা, ব্যাধি থেকে মুক্তির পথ অনুসন্ধান করতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন। ছন্দককে রথ ফেরানোর আদেশ দিলেন ।
নগরভ্রমণে বেরিয়ে সিদ্ধার্থ জরা, ব্যাধি, মৃত্যু ও সন্ন্যাসী দেখে মানব জীবনের পরিণতি সম্যকভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। একেই সিদ্ধার্থের চারি নিমিত্ত দর্শন বলা হয়ে থাকে।
অনুশীলনমূলক কাজ চারি নিষিলো কী বর্ণনা কর |
পাঠ : ৫
সিদ্ধার্থের গৃহত্যাগ
চার নিমিত্ত দর্শনের পরে সিদ্ধার্থ গৌতমের মনে শাস্তি নেই। সব সময়ই তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। ঐ তরুণ সন্ন্যাসীর গভীর ধ্যানমগ্ন দৃশ্যটি গৌতমের মনে দাগ কেটেছে। তিনিও দুঃখমুক্তির সন্ধানে গৃহত্যাগ করবেন সিদ্ধান্ত নিলেন। গৃহত্যাগের আগে তিনি পিতার অনুমতি নেওয়ার কথা ভাবলেন। পিতার নিকট গিয়ে তিনি তাঁর সংকয়ার কথা জানালেন। পুত্রের কথা শুনে রাজা যেন বাগ্রাহত হলেন। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে প্রাণাধিক পুত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি শাক্যরাজ্যের রাজপুত্র, সিংহাসনের উত্তরাধিকারী, তোমার কিসের অভাব যার জন্যে ভূমি সংসার ত্যাগ করতে চাও? সিদ্ধার্থ উত্তরে বললেন, চারটি বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারলে আমি সংসার ত্যাগ করব না :
গৌতম বুদ্ধের জীবন ও শিক্ষা
১. আমি কোনোদিন জরাগ্রস্ত হব না, চিরযৌবনপ্রাপ্ত হব ;
২. আমি কোনোদিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হব না ;
৩. মৃত্যু কোনোদিন আমার জীবন কেড়ে নেবে না এবং
৪. অক্ষয় সম্পদ যেন আমি লাভ করি।
পুত্রের শর্ত শুনে রাজা অবাক হয়ে বললেন, এ অসম্ভব! জরা, ব্যাধি, মৃত্যুকে রোধ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এ-শর্ত প্রত্যাহার কর পুত্র। তখন সিদ্ধার্থ বললেন, মৃত্যুও যে-কোনো সময় আমাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে । আমি গৃহত্যাগ করার সংকল্প করেছি। রাজা বুঝতে পারলেন মহৎ কর্তব্যসাধনে পুত্র সংকল্পবদ্ধ, তাঁকে আর বেঁধে রাখা যাবে না। তিনি সিক্ত কন্ঠে বললেন, পুত্র ! তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হোক । পিতাকে প্রণাম করে অশ্রুসজল নয়নে সিদ্ধার্থ পিতৃকক্ষ ত্যাগ করলেন ।
এর মধ্যে গোপাদেবীর কোল আলো করে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিল। পুত্রের জন্মের খবর পেয়ে গৌতম নিজের অজান্তে বলে উঠলেন, “রাহু জন্মেছে, বন্ধন উৎপন্ন হয়েছে।” দূতমুখে এ কথা জানতে পেরে রাজা শুদ্ধোদন পৌত্রের নাম রাখলেন ‘রাহুল'। এদিকে গৌতম সিদ্ধান্ত নিলেন, এ-বন্ধন ছিন্ন করতে হবে। ওদিকে রাজা গৌতমকে আনন্দে রাখার জন্য নৃত্য-গীতের আয়োজন করলেন। কিন্তু সিদ্ধার্থ আমোদ-প্রমোদে মনসংযোগ করতে পারলেন না, ঘুমিয়ে পড়লেন। নর্তকীরাও কুমারকে নিদ্রিত দেখে ইতস্ততভাবে এখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়ল। গৌতম জেগে উঠে এদের এলোমেলোভাবে ঘুমন্ত দেখে আরও বিরক্ত হলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, আজই গৃহত্যাগ করতে হবে। আষাঢ়ী পূর্ণিমার রাত, জ্যোৎস্নায় আলোকিত নগরী। কুমার শেষবারের মতো গোপাদেবীর ঘরে গেলেন। দেখলেন শিশুপুত্র রাহুল মায়ের সঙ্গে ঘুমাচ্ছে। পুত্রের নিষ্পাপ মুখখানা দেখে তিনি একটু মায়া অনুভব করলেন, ভাবলেন, একটু আদর করবেন। কিন্তু আদর করতে গেলে গোপা জেগে উঠতে পারেন। নিজেকে নিবৃত্ত করলেন। নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। সারথি ছন্দককে ডেকে তুললেন। নির্দেশ দিলেন ঘোড়াকে প্রস্তুত করতে । ছন্দক অশ্বরাজ কন্থককে সজ্জিত করে নিয়ে এলেন। সিদ্ধার্থ গৌতম কহুকের পিঠে চড়ে নগর থেকে বেরিয়ে ছুটে চললেন। তারপর তিনি অনোমা নদীর তীরে পৌঁছালেন। এবার বিদায়ের পালা। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে গৌতম তরবারি দিয়ে নিজের দীর্ঘ কেশ কর্তন করলেন। রাজপোশাক ও অলংকারগুলো খুলে ফেললেন। মুকুটটি ছন্দকের হাতে দিয়ে বললেন, “পিতাকে দিও।” রাজপোশাক ও অলংকার মায়ের হাতে দিতে বললেন। গোপাদেবীকে তাঁর পাদুকাদ্বয় আর পুত্র রাহুলকে সোনার তরবারি দিতে বললেন। আদেশ দিলেন, ছন্দক তুমি এবার ফিরে যাও। গৌতমের বিয়োগব্যথা সইতে না পেরে কন্থক তখনই প্রাণত্যাগ করল। শোকাচ্ছন্ন ছন্দক ফিরে গেলেন কপিলাবস্তুতে। রাজপুত্র রাজসুখ ত্যাগ করে হলেন গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী। গৌতম একাকী হেঁটে চললেন অনোমা নদীর তীর ধরে গভীর বনের দিকে ।
আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে ঊনত্রিশ বৎসর বয়সে সিদ্ধার্থের এই গৃহত্যাগ বৌদ্ধ সাহিত্যে ‘মহাভিনিষ্ক্রমণ' নামে
অভিহিত ।
অনুশীলনমূলক কাজ গৃহত্যাগের পূর্বে সিদ্ধার্থ পিতাকে কী শর্ত দিয়েছিলেন? সিদ্ধার্থের পুত্রের নাম রাহুল কেন হলো? |
পাঠ : ৬
বুদ্ধত্বলাভ
রাজগৃহ ছেড়ে নদী বন পাহাড়ে ঘেরা প্রকৃতির কোলে চলে এলেন গৌতম। ঋষিদের আশ্রমে কিছুকাল অবস্থান করে বৈশালী নগরে পৌঁছলেন। এখানে ঋষি আরাড় কালামের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন, শিক্ষালাভ করলেন তাঁর দর্শন। তাঁর সমাধির সাত স্তরও অনুশীলন করলেন। কিন্তু তাঁর নিকটও গৌতমের জ্ঞান অর্জনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হলো না। তিনি রাজগৃহে ফিরে গেলেন। এখানে রত্নগিরি পর্বতের গুহায় কিছুকাল অবস্থান করেন। এ গুহা ছিল বহু সাধকের আবাসস্থল। তিনি সেই সাধকদের কাছ থেকে জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করলেন। একদা ভিক্ষা সংগ্রহের সময়ে রাজা বিম্বিসার এই তরুণ সন্ন্যাসীকে দেখে আকৃষ্ট হলেন। ডেকে পাঠালেন রাজপুরীতে। অনুরোধ করলেন কঠোর সন্ন্যাস জীবন ত্যাগ করে রাজসভায় উচ্চ পদ গ্রহণ করতে। কিন্তু যিনি রাজসিংহাসন ছেড়ে এসেছেন, উচ্চ পদ কিংবা সম্পদ কি তাকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারবে? তিনি তো রাজ ঐশ্বর্য বিসর্জন দিয়েছেন।
সমসাময়িক প্রখ্যাত শিক্ষাগুরু রামপুত্র রুদ্রকের নিকট কিছুকাল ধর্মচর্চা করলেন। একসময় তিনি গুরুর সমকক্ষতা অর্জন করলেন। সেইসঙ্গে উপলব্ধি করলেন, গুরুর শিক্ষা ও সাধনপ্রণালি অনেক উচ্চমার্গের হলেও এ দ্বারা সত্যজ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। তিনি গুরুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাজগৃহ ত্যাগ করলেন। আরাড় কালামের তিন শিষ্য — কৌণ্ডিন্য, বপ্প ও অশ্বজিৎ এবং গুরু রামপুত্র রুদ্রকের দুই শিষ্য— মহানাম ও ভদ্দিয় তাঁর সাথে যোগ দেন ।
রাজগৃহ থেকে অনেক হেঁটে পৌঁছলেন উরুবেলায়। স্থানটি প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে ঘেরা। তিনি সেনানী নামে একটি গ্রামে এলেন। পাশেই গভীর বন। বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী নদী-নৈরঞ্জনা। এ-নদীর আরেক নাম ফল্গু। নির্জন প্রকৃতি গৌতমকে সব সময়ই আকৃষ্ট করত। ফলে জায়গাটি তাঁর খুব পছন্দ হলো । সিদ্ধান্ত নিলেন, দুঃখের শেষ জানার জন্য এখানেই তপস্যায় রত হবেন।
ধ্যানস্থ সিদ্ধার্থ গৌতম
কঠোর সাধনায় পেরিয়ে গেল ছয়টি বৎসর। জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে গেলো গৌতমের সুন্দর দেহসৌষ্ঠব। দুর্বল শরীরে হাঁটা-চলায় অক্ষম হয়ে গেলেন। তিনি এতই দুর্বল ছিলেন যে একদিন নদীতে স্নান করতে নেমে আর উঠতে পারছিলেন না। অনেক কষ্টে পাশের একটি বড় গাছের শাখা ধরে তিনি পারে উঠতে সক্ষম হলেন। তিনি অনুধাবন করলেন, এভাবে কঠোর সাধনা তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। দুঃখমুক্তির উপায় জানা সম্ভব হবে না। তিনি উপলব্ধি করলেন, অল্প অল্প আহার করে মধ্যপথ অবলম্বনই হবে সাধনার প্রকৃত পথ। কঠোর সাধনা বা বিলাসীজীবন, কোনোটিই দুঃখমুক্তির অনুকূল নয়। সুতরাং তিনি মধ্যম পথ অবলম্বন করলেন।
শ্রমণ গৌতমকে আহার করতে দেখে অনুগামী পাঁচজন শিষ্য কোন্যি, বপ্প, ভদ্দিয়, মহানাম ও অশ্বজিৎ তাঁকে ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি একা হয়ে গেলেন। একদিন স্নান করে তিনি বিশাল অশ্বত্থ বৃক্ষের তলায় উপবেশন করলেন। এসময় সুজাতা নামে সেনানী গ্রামের এক গৃহবধূ শ্রমণ গৌতমকে পায়েস দান করলেন। গৌতম সুজাতার পায়েস গ্রহণ করলেন। ঐদিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা তিথি। পায়সান্ন খেয়ে তিনি পুনরায় ধ্যানে বসলেন। প্রতিজ্ঞা করলেন, বুদ্ধত্ব লাভ না করে তিনি এই আসন থেকে উঠবেন না ।
আকাশে বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ। অশ্বত্থমূলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ গৌতম গভীর ধ্যানে নিমগ্ন। দুঃখ-মুক্তি অন্বেষায় তিনি সাধনারত। ধরণী প্রকম্পিত হলো। লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা, ভয়ভীতি প্রভৃতি অশুভ শক্তির প্রতীক মার তাঁর এই প্রতিজ্ঞায় ভয় পেয়ে গেলেন। তাঁকে লক্ষ্যচ্যুত করার জন্য দলবলসহ মার নানারকম চেষ্টা করতে থাকল। তুমুল যুদ্ধ হলো। রতি, আরতি ও তৃষ্ণা – মারের এই তিন কন্যা পুষ্পধনু ও পঞ্চশর নিয়ে ধ্যানমগ্ন বোধিসত্ত্বকে আক্রমণ করল। তাঁর তপোভঙ্গ করার জন্য নানারকম অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন ও ছলনা করতে থাকল । শুরু হলো মারের সঙ্গে তর্কযুদ্ধ। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, যদি পর্বত, মেরু
স্থানচ্যুত হয়, সমস্ত জগৎ শূন্যে মিশে যায়, সমস্ত নক্ষত্র, জ্যোতির ইন্দ্রের সাথে ভূমিতে পতিত হয়, বিশ্বের সকল জীব একমত হয় এবং মহাসমূদ্র শুকিয়ে যায়, তথাপি আমাকে এই আসন থেকে বিযাত্র বিচলিত করতে পারবে না।' যুদ্ধে যার শাক্য সিংহের নিকট পরাজিত হলো। বোধিজ্ঞান লাভ করে সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ' হলেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল পঁয়ত্রিশ বছর।
ধ্যানে বসে তিনি রাতের প্রথম প্রহরে জাতিস্মর জ্ঞান বা পূর্বজন্মের বিষয়ে জ্ঞান লাভ করলেন। রাজের দ্বিতীয় প্রহরে দিব্যচক্ষুসম্পন্ন হলেন। তৃতীয় প্রহরে জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুর উৎপত্তির বিষয়ে অবগত হলেন। চার আর্যসত্য উপলব্ধি করলেন। দুঃখ নিরোধের উপায় আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ আবিষ্কার করলেন।
'বোধি' শব্দের অর্থ পরম জ্ঞান বা শ্রেষ্ঠ জ্ঞান। 'বোধি' অর্জন করে তিনি বুদ্ধ হয়েছিলেন। যে-অশ্বত্থ গাছের নিচে তিনি যুদ্ধত্ব লাভ করলেন তার নাম হলো 'বোধিবৃক্ষ' বা বোমি। তিনি জগতে গৌতমবুদ্ধ নামে পরিচিত হন। যে-স্থানে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন তা 'বুদ্ধ গয়া' নামে পরিচিতি লাভ করে ।
বুদ্ধত্বলাভের পরে তাঁর বোধিসত্ত্ব জীবনের সমাপ্তি হয়। তিনি নির্বাণ মার্গের জ্ঞান লাভ করেন। তিনি প্রত্যক্ষ করলেন অবিদ্যা বা অজ্ঞানতাই আমাদের সকল দুঃখের কারণ। অবিদ্যার ধ্বংসের দ্বারা দুঃখের বিনাশ সম্ভব। বুদ্ধত্বলাভের পরে তিনি হলেন জ্যোতির্ময়, জগতে ধ্বনিত হলো আনন্দধ্বনি। তৃষ্ণার ক্ষয় করে তিনি দুঃখকে জয় করেছেন, জন্মমৃত্যুর বন্ধন ছিন্ন করেছেন। পরবর্তী সাত দিন তিনি বোধিবৃক্ষের নিচে বজ্রাসনে বসে সুখলাভ করলেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে ঈশান কোণে দাঁড়িয়ে বোধিবৃক্ষের দিকে অনিমেষ নয়নে তাকিয়ে রইলেন। তৃতীয় সপ্তাহে বোধিবৃক্ষের চারপাশে চংক্রমণ করলেন। চতুর্থ সপ্তাহে রতন ঘর চৈত্যে বসে বিমুক্তি সুখ অনুভব করলেন। পঞ্চম সপ্তাহে অজপাল ন্যাগ্রোধ বৃক্ষ তলে পদ্মাসনে বসে ধ্যানস্থ থাকলেন । ষষ্ঠ সপ্তাহে মুচলিন্দ বা মুচকুন্দ বৃক্ষের নিচে ধ্যানে অতিবাহিত করলেন। সপ্তম সপ্তাহ রাজায়তন বৃক্ষের নিচে ধ্যান করে অতিবাহিত করলেন। এখানে তিনি মার্গসুখ, ফলসুখ ও বিমুক্তিসুখ উপভোগ করলেন। সাত সপ্তাহ শেষে যখন বুদ্ধের ধ্যানভঙ্গ হলো তখন সে-পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন তপসু ও ভল্লিক নামক দুই বণিক। রাজায়তন মূলে ধ্যানাবিষ্ট জ্যোতির্ময় মহাপুরুষকে দেখে তাঁরা মধু ও পিঠা দ্বারা তাঁকে পূজা করলেন। বুদ্ধ সানন্দে গ্রহণ করলেন বণিকদ্বয়ের শ্রদ্ধাদান। সুজাতার পায়সান্ন গ্রহণের ঊনপঞ্চাশ দিন পরে এই তাঁর প্রথম আহার। বুদ্ধ শ্রদ্ধাদান অনুমোদনকালে তাঁর অভিনব দুঃখমুক্তির পথ সম্পর্কে দেশনা করলেন। কৃতার্থ বণিকদ্বয় বুদ্ধ ও ধর্মের শরণ নিলেন। বুদ্ধের প্রথম উপাসক হওয়ার গৌরব লাভ করে ধন্য হলেন তপস্তু ও ভল্লিক। তখনও সঙ্ঘ গঠিত না হওয়ায় তাঁরা 'দ্বি-বাচিক উপাসক' নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করেন। বুদ্ধত্ব লাভের স্মৃতিবিজড়িত সাতটি স্থান, যথা : বোধি মূল (বোধি পালঙ্ক), অনিমেষ চৈত্য, চংক্রমণ চৈত্য, রতন ঘর চৈত্য, অজপাল ন্যাগ্রোধ বৃক্ষ, মুচলিন্দ মূল ও রাজায়তন বৃক্ষ প্রভৃতি স্থান বৌদ্ধশাস্ত্রে সপ্ত মহাস্থান নামে অভিহিত। বৌদ্ধরা পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে এ সপ্ত মহাস্থানের উদ্দেশে বন্দনা নিবেদন করে থাকে ।
অনুশীলনমূলক কাজ রাজা বিম্বিসার সিদ্ধার্থকে কী প্রস্তাব দিয়েছিলেন? 'মধ্যম পথ' বলতে কী বোঝ? কারা দ্বি-বাচিক উপাসক ছিলেন? সপ্ত মহাস্থানের নাম লেখ |
পাঠ : ৭ ধর্মপ্রচার
বুদ্ধত্বলাভের পরে বুদ্ধ তাঁর নবলব্ধ ধর্মপ্রচারের সিদ্ধান্ত নিলেন। এজন্যে তিনি আষাঢ়ী পূর্ণিমাতিথিতে সারনাথের ঋষি পতন মৃগদাবে উপস্থিত হলেন। ঐখানে তখন অবস্থান করছিলেন তাঁর পূর্বের পাঁচ সঙ্গী : কোণ্ডিন্য, বপ্প, ভদ্দিয়, মহানাম ও অশ্বজিৎ। এঁদের কাছেই তিনি প্রথম নবলব্ধ ধর্মপ্রচার করলেন। এঁরাই বুদ্ধের কাছে প্রথম দীক্ষাপ্রাপ্ত ভিক্ষু। বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে এঁরা পঞ্চবর্গীয় শিষ্য নামে পরিচিত। তাঁদের দীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করলো 'ভিক্ষুসংঘ'। বুদ্ধের প্রথম ধর্ম-দেশনা ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র' নামে খ্যাত। বুদ্ধ দেশনা করলেন, নব আবিষ্কৃত চতুরার্য সত্য, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ, প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব, অনিত্য ও অনাত্মবাদ ইত্যাদি। পঞ্চশিষ্যগণ বিমুগ্ধ চিত্তে সারারাত ধরে নবধর্মের অমৃতময় বাণী শ্রবণ করলেন। বুদ্ধ পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের নিয়ে ঐ তপোবনেই প্রথম বর্ষাবাস শুরু করলেন। এ-সময়ে শ্রেষ্ঠিপুত্র যশ ও তাঁর চার বন্ধু সংসারের প্রতি বীতরাগ হয়ে বুদ্ধের নিকট প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। এঁদের অনুসারী আরও
পঞ্চাশজন যুবকও ভিক্ষু হলেন। বৃদ্ধ এই ভিক্ষুসঙ্ঘকে বর্ষাবাস শেষে দিকে দিকে অনন্য এই ধর্মপ্রচারে প্রেরণ করলেন। তিনি বললেন মুস্তাহৎ তিক্ষ্ণবে সপাসেছি, যে দিব্বা যে চ মানুসা, ডুমুহে পি ভিক্খৰে মুত্তা সৰ্ব্বপাসেছি যে দিব্ব যে চ মানুসা, চরথ ভিক্খবে চারিকং বহুজন হিতায় বহুজন সুধায় লোকানুকম্পায, অশ্বাষ হিতায় সুখায় দেমান যা একেন যে অপমিখ, দেখে ভিক্খবে ধম্মং আদি কল্যাণ, মঙ্গে কল্যাণং পরিশোসানকল্যাপং।' অর্থাৎ হে ভিক্ষুগণ ! আমি দেব-মনুষ্য এবং সকল প্রকার সংযোজন হতে যুক্ত। ভিক্ষুগণ ! তোমরাও দেব-মনুষ্য এবং সকল প্রকার সংযোজন হতে যুক্ত হও। হে ভিক্ষুগণ ! বহুজনের মঙ্গলের জন্য, কল্যাণের জন্য ভোমরা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়। দুজন একত্রে গমন করবে না, প্রচার কর সেই ধর্ম যে ধর্মের আদিতে, মধ্যে এবং অস্তে কল্যাণ। বুদ্ধ এরূপ নির্দেশ প্রদান করে নিজে উরুবেলার সেনানী গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।
উরুবেলার পথে এক নিষিদ্ধ বন। সেই বনের মধ্যে বিশাল বৃক্ষের সুশীতল ছায়ার যুদ্ধ মধ্যাহ্নে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় একদল যুবক হৈচৈ করে তাঁর নিকটে এসে জিজ্ঞাসা করল, প্রভু! আপনি কি এ পথ দিয়ে কোনো স্ত্রীলোককে যেতে দেখেছেন? তখন যুদ্ধ বললেন, কুমারগণ । স্ত্রীলোকে তোমাদের কী প্রয়োজন? যুবকণ জানাল, 'ঐ স্ত্রীলোক নগর-নন্দিকা, আমাদের সংগে প্রমোদবিহারে এসেছিল। আমরা সকলে প্রমোদে মেতে উঠেছিলাম। এ সুযোগে নগর-নন্দিকা আমাদের মূল্যবান বস্ত্রাদি-জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা এখন তার সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। তথাগত এবার যুবকদের প্রশ্ন করলেন,
কুমারগণ! তোমাদের পক্ষে কোনটি শ্রেয়কর বিবেচনা কর এ গণিকা অন্বেষণ কিংবা আত্মানুসন্ধান ? আত্মানুসন্ধান? সে আবার কী! কুমারগণ অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করল। বুদ্ধ তাদের শান্ত হয়ে বসতে বললেন, তারাও বুদ্ধকে বন্দনা করে সামনে বসলেন। অতঃপর বুদ্ধ যুবকদের আত্মানুসন্ধান কী ব্যাখ্যা করলেন, শোনালেন ধর্মকথা। এতে যুবকদের জ্ঞানোদয় হলো। তাঁরা বুদ্ধের কাছে দীক্ষা নিলেন।
উরুবেলার পথে পথে তিনি অনেককে এই কল্যাণধর্মে দীক্ষিত করলেন। এঁদের মধ্যে অগ্নিউপাসক কশ্যপ ভ্রাতৃত্রয় উল্লেখযোগ্য। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি রাজগৃহে গিয়ে রাজা বিম্বিসারের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। রাজা তাঁকে ‘বেণুবন বিহার' দান করেন। এ বিহারেই সারিপুত্র ও মৌদগল্যায়ন পঞ্চাশ জন শিষ্যসহ বুদ্ধের ধর্ম গ্রহণ করেন। এখানেই বুদ্ধ ভিক্ষুসঙ্ঘের জন্য বিনয় বিধান প্রবর্তন করেন। রাজগৃহ থেকে তিনি কপিলাবস্তুতে যান। সেখানে পিতা শুদ্ধোদন, বিমাতা মহাপ্রজাপতি গৌতমীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তৎপর তিনি গোপাদেবীকে ধর্মোপদেশ প্রদান করেন। আনন্দ, দেবদত্ত, অনিরূদ্ধ, ভৃগু, কিম্বিল, ভদ্দিয় প্রমুখ শাক্যকুমারগণ এসময় বুদ্ধের নিকট প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। এঁদের সহচর নাপিতপুত্র উপালিও একইসঙ্গে প্রব্রজ্যা নেন। বৈমাত্রেয় ভ্রাতা সুন্দর নন্দকেও বুদ্ধ প্রব্রজ্যা দেন। পুত্র রাহুলকে শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষা দিয়ে তিনি বুদ্ধ শাসনের উত্তরাধিকার দেন। রাজা শুদ্ধোদন পুত্রস্নেহবশত বুদ্ধকে রাজ্যভার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান। উত্তরে বুদ্ধ রাজাকে এরূপ বলেন, “মহারাজের অপরিসীম পুত্রস্নেহ আমার অপরিজ্ঞাত নয় । কিন্তু আপনার স্নেহডোর তো এখন ছিন্ন হয়েছে। আপনার সেই পুত্র প্রীতির দৃষ্টি দিয়ে আপনি আপনার প্রজাবৃন্দের দিকে তাকান। তাদের প্রত্যেককে আপনি পুত্রের ন্যায় স্নেহ করুন এবং সকল মানুষকে, এমনকি প্রত্যেকটি জীবকে আপনি ভালোবাসুন। তা হলে আপনি সিদ্ধার্থের ন্যায় অগণিত সন্তান লাভ করবেন এবং পরিণামে নির্বাণ সুখের অধিকারী হবেন।” এভাবে বিমুক্ত পুরুষ ভগবান বুদ্ধ স্নেহশীল পিতাকে একজন আদর্শ প্রজাপালক, ধার্মিক নরপতির করণীয় বিষয়ে সচেতন করেন ।
এক সময় শাক্য ও কোলিয়দের মধ্যে রোহিণী নদীর জল নিয়ে বিবাদ হয়েছিল। বুদ্ধ সে-বিবাদ মীমাংসার জন্য বৈশালী থেকে কপিলাবস্তু যান। এসময় পাঁচশত শাক্যকুমার ভিক্ষুসঙ্ঘে যোগদান করেন। তাঁদের স্ত্রীগণ মহাপ্রজাপতি গৌতমীর নেতৃত্বে বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হয়ে ভিক্ষুণীব্রত গ্রহণ করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু বুদ্ধ তাঁদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বৈশালীতে চলে যান। মহাপ্রজাপতি ও তাঁর সহচারিণীগণ হতাশ না হয়ে কেশ কর্তন এবং কাষায়বস্ত্র পরিধান করে বৈশালী পর্যন্ত বুদ্ধের অনুগমন করেন। তাঁরা ক্ষতবিক্ষত পায়ে বিহারে উপস্থিত হয়ে দ্বিতীয়বার বুদ্ধকে অনুরোধ জানাল। শেষে আনন্দ থের তাঁদের ভিক্ষুণীধর্মে দীক্ষা দেয়ার জন্য বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা জানান। অবশেষে বুদ্ধ প্রার্থনা অনুমোদন করলে মহাপ্রজাপতি গৌতমীর বাসনা পূর্ণ হয়। মহাপ্রজাপতি গৌতমীর নেতৃত্বে গোপা ও অন্যান্য শাক্য নারীদের নিয়ে ভিক্ষুণীসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে নারীগণ সঙ্ঘভুক্ত হলেন।
ভিক্ষুণীসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করা প্রসঙ্গে বুদ্ধ প্রিয় শিষ্য আনন্দকে বলেছিলেন, “হে আনন্দ! পুরুষের ন্যায় নারীরাও শ্রামণ্যফলের অধিকারী হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “নারীরা উচ্চতর শ্রামণ্যফল লাভের যোগ্য এবং ক্ষেমা, উৎপলবর্ণা, ধর্মদিন্না, ভদ্দকপিলানীর ন্যায় ভিক্ষুণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আমার প্রবর্তিত শাসনের মঙ্গল ব্যতীত অমঙ্গল হবে না।” তিনি আরও বলেন, মার্গফললাভে নারী পুরুষের সমকক্ষ, কোনো তারতম্য নেই ।
বুদ্ধ একসময় শ্রাবস্তীতে অবস্থান করছিলেন। কৃশা গৌতমী নামে এক অসহায় নারীর একমাত্র শিশুপুত্রটি মারা যায়। তিনি পুত্রশোকে পাগলিনীপ্রায় হয়ে বুদ্ধের কাছে ছুটে এসে তাঁর একমাত্র ছেলেকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য অনুরোধ করেন। তথাগত বুদ্ধ অবগত আছেন মৃতের প্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু এই শোকার্ত নারীর শোক উপশম করতে হবে। প্রকৃত সত্য বোঝাতে হবে। বুদ্ধ শান্ত, ধীর কণ্ঠে কৃশা গৌতমীকে বললেন, তুমি এমন গৃহ থেকে এক মুঠো সরিষা নিয়ে এসো, যেখানে কখনো পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভগিনী, পুত্র-কন্যা অথবা অন্য কারও মৃত্যু হয়নি। শোকার্ত জননী মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে সারাদিন শ্রাবস্তীর দ্বারে দ্বারে ঘুরলেন একমুঠো সরিষার সন্ধানে। কিন্তু সরিষা পেলেও এমন কোনো গৃহ খুঁজে পেলেন না যেখানে কেউ মারা যায়নি। শ্রান্ত-অবসন্ন কৃশা গৌতমী দিনশেষে অনুধাবন করলেন, সকলেই মৃত্যুর অধীন। মৃত্যুই মানুষের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি, তাঁর পুত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। অতঃপর তিনি বুদ্ধের কাছে ফিরে এলেন। বুদ্ধ বললেন, যে-ব্যক্তি মৃত্যু দ্বারা আক্রান্ত কোনোভাবেই তাকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। জীবিত ব্যক্তিমাত্রই মৃত্যুর অধীন। একথা শ্রবণ করে কৃশা গৌতমীর শোক উপশম হলো, তাঁর জ্ঞানোদয় হলো । তিনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে ভিক্ষুণীসঙ্ঘে প্রবেশ করলেন। এভাবেই বুদ্ধ শরণাগতদের বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করতেন ।
বুদ্ধের সময় জাতিভেদ প্রথা চরম আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু বুদ্ধ তাঁর সঙ্ঘে সকল পেশা ও জাতি-গোত্রের মানুষের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত করেন। বৌদ্ধধর্মে কোনোরূপ শ্রেণিভেদ, জাতিভেদ কিংবা বর্ণবৈষম্যের স্থান নেই। ব্রাহ্মণ ভরদ্বাজ, মগধের রাজা বিম্বিসার, কোশলের রাজা প্রসেনজিতসহ বিভিন্ন রাজণ্যবর্গ, নাপিতপুত্র উপালি, ক্ষত্রিয় রাজপুত্রগণ, নগরশোভিনী আম্রপালি, অস্পৃশ্য সুনীত, শ্রেষ্ঠী অনাথপিণ্ডিক, দাসী পূর্ণা, স্বর্ণকারপুত্র চুন্দ এমন অনেকের সমাগমে বুদ্ধের ধর্ম ও সঙ্ঘ পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। জন্ম নয়, কর্মগুণেই এঁরা ধর্ম, সঙ্ঘ, বিনয় ও বুদ্ধশাসনের শ্রীবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছিলেন । সাম্য, মৈত্রী, করুণার মন্ত্রে উজ্জীবিত বৌদ্ধধর্ম নানারূপ বৈষম্য-পীড়িত তৎকালীন ভারতবর্ষে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। সুদীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর তিনি বিভিন্ন নগর ও জনপদে ধর্মপ্রচার করেন। তন্মধ্যে বুদ্ধগয়া, শ্রাবস্তী, সারনাথ, কৌশাম্বি, বৈশালী, রাজগৃহ, বজ্জি, মল্ল, পাবা, কুশীনারা, চুনার, কনৌজ, মথুরা, আলবী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
অনুশীলনমূলক কাজ পঞ্চবর্গীয় শিষ্য কাদের বলা হয়? বেণুবন বিহার কেন বিখ্যাত? বুদ্ধ রাজা শুদ্ধোদনকে প্রজাপালন বিষয়ে কী উপদেশ দিয়েছিলেন? |
পাঠ : ৮ মহাপরিনির্বাণ
গৌতম বুদ্ধ সুদীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর দিকে দিকে বিচরণ করে যে ধর্মের আদি, মধ্য ও অন্তে কল্যাণ তা প্রচার করেন। অতঃপর, এক মাঘী পূর্ণিমার দিনে তিনি বৈশালীর চাপাল চৈত্য নামক উদ্যানে অবস্থান
করছিলেন। ঐদিন তিনি উপস্থিত ভিক্ষুসঙ্ঘ, দেবতা ও মানুষের সামনে ঘোষণা দিলেন, পরবর্তী বৈশাখী পূর্ণিমাতিথিতে তিনি আয়ু সংস্কার ত্যাগ করবেন। জগতের আলো গৌতম বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করবেন। অতঃপর তিন মাস অতিক্রান্ত হয়ে বৈশাখী পূর্ণিমার প্রাক্কালে তিনি ভিক্ষুসঙ্ঘসহ কুশীনগরে উপস্থিত হলেন । কুশীনগরের পাবা নামক স্থানে এসে তিনি স্বর্ণকারপুত্র চুন্দের আতিথ্য গ্রহণ করলেন। আহার শেষে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। পাবা থেকে ফিরে বুদ্ধ মল্লদের শালবনে যমক (জোড়া) শালগাছের নিচে বিশ্রামের জন্য শয়ন করলেন। আকাশে বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ। বুদ্ধের সেবক প্রিয় শিষ্য আনন্দ ও অন্য ভিক্ষুরা বুদ্ধের চারপাশে উপবিষ্ট। বুদ্ধের অন্তিম সময়ে আনন্দ অত্যন্ত অধীর হয়ে পড়েন। আনন্দের উদ্দেশে বুদ্ধ বললেন, “আনন্দ ! অত্তদীপা বিহরণ, অত্তসরণা অঞসরণা, ধম্মদীপা বিহরণ ধম্মসরণা অঞসরণা।” অর্থাৎ হে আনন্দ নিজেই নিজের দীপ হয়ে বিচরণ করো, আত্ম শরণই অনন্য শরণ, ধর্মদীপ হয়ে বিচরণ করো। ধর্মের শরণই অনন্য শরণ। তিনি আরও বলেন, 'হে আনন্দ ! আমার অবর্তমানে তোমাদের এরূপ মনে হতে পারে, শাস্তার উপদেশ শেষ হয়েছে, আমাদের আর শাস্তা নেই। আনন্দ ! তোমরা এরূপ মনে করবে না। আনন্দ । মহৎ কর্তৃক যে ধর্ম-বিনয় দেশিত ও প্রজ্ঞাপ্ত হয়েছে সেই ধর্ম-বিনয় আমার অবর্তমানে তোমাদের শাস্তা।' অতঃপর, শেষক্ষণে তিনি 'সুভদ্র' কে দীক্ষা দেন। বুদ্ধ শেষবারের মতো উপস্থিত ভিক্ষুসঙ্ঘকে জিজ্ঞাসা করলেন, বুদ্ধের প্রতি, ধর্মের প্রতি, সঙ্ঘের প্রতি অথবা আমার নির্দেশিত পন্থা সম্পর্কে কারো কোনো সংশয় আছে কি না। সমবেত ভিক্ষুগণ মৌন রইলেন। এসময় তিনি তাঁর শেষ উপদেশবাণী প্রদান করেন, “হে ভিক্ষুগণ। সংস্কারসমূহ ব্যয় ধর্মশীল (ক্ষয়শীল)। অপ্রমাদের সাথে নিজ নিজ কর্তব্যপালনে তৎপর হও।” বুদ্ধের শেষ বাণীসমূহ 'মহাপরিনির্বাণ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। শেষ বাণী উচ্চারণের সাথে সাথে বুদ্ধ ধ্যানে নিমগ্ন হলেন। একটির পর একটি ধ্যানের স্তর অতিক্রম করে তিনি নিরোধ সমাধি মগ্ন হলেন এবং রাত্রির তৃতীয় যামে পরম সুখময় মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল আশি বছর।
সপ্তাহকাল তাঁর মরদেহ সংরক্ষণ করা হয়। আয়ুষ্মান মহাকশ্যপ স্থবির তাঁর চিতায় অগ্নিসংযোগ করেন। তাঁর পূতাস্থিসমূহ ব্রাহ্মণ দ্রোণ আট ভাগ করেন। অজাতশত্রু, লিচ্ছবিগণ, শাক্যগণ, বুলিয়গণ, কোলিয়গণ, বেঠদ্বীপবাসী, পাবার মল্লগণ ও কুশীনারার মল্লরা পূতাস্থির অংশ লাভ করেন। বুদ্ধের পূতাস্থি ‘বুদ্ধ ধাতু’ নামে অভিহিত। বৌদ্ধরা এখনও বুদ্ধ ধাতুর উদ্দেশে বন্দনা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
অনুশীলনমূলক কাজ বুদ্ধ কখন ও কোথায় মহাপরিনির্বাণের ঘোষণা দেন? বুদ্ধের শেষ উপদেশ কী ছিল? কে কে বুদ্ধের পূতাস্থি লাভ করেছিলেন? |
অনুশীলনী
শূন্যস্থান পূরণ
১. তাঁর জীবন ছিল , রসে সিক্ত।
২. রানি আনন্দে শিহরিত হলেন।
৩. শাক্যবংশে এক ৪. উৎসবে মেতে উঠল আবির্ভাব হবে।
৫. বিশ্বে তিনি বুদ্ধ নামেই পরিচিত।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সিদ্ধার্থের জন্মলাভের ঘটনা সংক্ষেপে লেখ ।
২. ঋষি অসিতের কাহিনী বর্ণনা কর ।
৩. ‘মহাভিনিষ্ক্রমণ' বলতে কী বোঝ ?
৪. পঞ্চবর্গীয় শিষ্য কারা ?
৫. বুদ্ধের শেষ উপদেশ কী ছিল ?
বর্ণনামূলক প্রশ্ন
১. গৌতম বুদ্ধের ধর্মপ্রচার সম্পর্কে যা জান আলোচনা কর ।
২. সিদ্ধার্থের বাল্যকাল সম্পর্কে বর্ণনা কর ।
৩. গৌতম বুদ্ধের ‘মহাপরিনির্বাণ' বর্ণনা কর ।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
রানি মায়াদেবী কোন পূর্ণিমা তিথিতে পিতৃগৃহে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন ?
ক. বৈশাখী
খ. আষাঢ়ী
গ. আশ্বিনী
ঘ. কার্তিকী
বাল্যকালে সিদ্ধার্থের অনন্য প্রতিভার পরিচয় ঘটে -
i ঋষি অসিতের ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়ন করে
ii রোহিনী নদীতে পতিত বৃক্ষ সরিয়ে
iii জলের প্রবাহ উন্মুক্ত করে
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক. i
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
নিচের ছকটি লক্ষ কর এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও
৩।‘?' চিহ্নিত স্থানে কোন ঘটনার নির্দেশ করছে ?
ক. সিদ্ধার্থের সংসারজীবনের
খ. সিদ্ধার্থের জন্মবৃত্তান্তের
গ. সিদ্ধার্থ একদল লোকেকে শবদেহ নিয়ে যেতে দেখতে পান
ঘ. সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের
81 উক্ত ঘটনায় সিদ্ধার্থ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন—
i মানবমুক্তির পথ অন্বেষণে
ii সন্ন্যাসধর্ম পালনে আত্মনিয়োগে
iii নির্বাসনে যাওয়ার
গৌতম বুদ্ধের জীবন ও শিক্ষা
নিচের কোনটি সঠিক ?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
১।
ক. কে হাঁসটিকে তীরবিদ্ধ করেন ?
খ. ঋষি অসিতের ভবিষ্যদ্বানী কী ছিল ? ব্যাখ্যা কর।
গ. প্রদর্শিত তথ্য ছকটি কার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ? ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. তথ্য ছকে বর্ণিত মনীষী “ছয় বছরের তপস্যায় মধ্যমপথ অবলম্বনের মাধ্যমে জ্ঞান লাভে সমর্থ হন”-এ বক্তব্যের সাথে তুমি কি একমত ? যুক্তি প্রদর্শন কর।
২। শুভার্থী সমাজসেবী পরিবারের রূপবতী মেয়ে। তিনি যথাসময়ে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তাই শুভার্থীর পিতা তাঁকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। শিক্ষিত, অশ্বচালনা ও সকল বিষয়ে পারদর্শী এক যুবকের সাথে বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। তাঁদের সুখের সংসারজীবন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি বরং শুভার্থীর স্বামী মনের বাসনা পূরণের জন্য বৈরাগ্য জীবনগ্রহণের লক্ষ্যে চলে গেলেন এবং পরমজ্ঞান লাভে ব্রতী হন।
ক. রানি মহামায়া কোন পূর্ণিমায় স্বপ্ন দেখলেন ?
খ. মহর্ষি কালদেবল রাজকুমারকে দেখে প্রথমে খুশি হয়ে পরে কেঁদে ফেললেন কেন ? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটির সাথে পাঠ্যবইয়ের কোন ঘটনার তুলনা করা হয়েছে-ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. শুভার্থীর স্বামী তাঁর মনের বাসনা পূরণে গৌতমবুদ্ধকে কীভাবে অনুসরণ করেন, তা ধর্মীয় আলোকে বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখুন...